কভার লেটার কি? কভার লেটার লেখার নিয়ম

আপনার জন্য একটি সঠিক চাকরি খুঁজে বের করার পরে, আপনাকে চাকরির আবেদনের জন্য একটি পেশাদার কভার লেটার তৈরি করতে হবে। কিন্তু অনেক কেই কভার লেটারে কী লিখবে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে দেখা। সেজন্য এখানে আমরা কভার লেটার কি? চাকরির কভার লেটার লেখার নিয়ম বাংলায় ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।

যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাকরির আবেদন পত্র প্রেরণ করার সময় কভার লেটার পাঠানোটা বাধ্যতামূলক নয়। তবুও, কভার লেটার হল চাকরি প্রার্থীদের জন্য চাকরি পাওয়ার একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যাটি আপনাকে আরো বিস্তারিত ভাবে বলার সুযোগ দিবে, “কেন আপনি এই পদের জন্য যোগ্য!” কেন কোম্পানি আপনাকে নিয়োগ করবে? আপনার বিশেষ বিশেষ যোগ্যতা কি” ইত্যাদি।

কভার লেটার কি?

কভার লেটার হল এক পৃষ্ঠার একটি অফিসিয়াল চিঠি নথি যা নিয়োগকর্তার সাথে চাকরি প্রার্থীকে সঠিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়। চাকরি প্রার্থীগণ চাকরির আবেদন করার সময় এটিকে ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন হিসাবে ব্যবহার করে। কভার লেটার সাধারণত 250 থেকে 400 শব্দের হয়ে থাকে।

এটি মূলত এক ধরনের ব্যাখ্যা পত্র। যেখানে চাকরি প্রার্থীগণ তার জীবনবৃত্তান্তে উল্লিখিত যোগ্যতা, দক্ষতা, সফলতা, আগ্রহগুলি পেশাদার উপায়ে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে। তা ছাড়া তার বিশেষ যোগ্যতা কি, কেন তিনি এই পদের জন্য যোগ্য! কেন তিনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে! কেন নিয়োগকর্তা তাকে নিয়োগ করেন তা ব্যাখ্যা করে।

কভার লেটার লেখার নিয়ম :

একটি পেশাদার কভার লেটার লেখার জন্য আপনাকে কভার লেটারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যোগ করতে হবে। যা আপনার পেশাদারিত্ব এবং নিয়োগকর্তার কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।

পরিচিতি প্রদান :

নিয়োগ কর্তার নিকট সর্বোত্তম উপায়ে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে কভার লেটার লেখা শুরু করুন। আপনি কেন এই কোম্পানী এবং এই পদের জন্য আগ্রহী তা সম্পর্কে নিয়োগকার্তাকে একটি পরিষ্কার ধারণা দিন।

কারণ হল নিয়োগকারী ম্যানেজাররা চাকরির প্রতি আপনার আগ্রহ এবং শেখার আকাঙ্ক্ষারকে বেশি গুরুত্ব দেয়।

তাই কভার লেটারের শুরুতে, আপনি কোম্পানিকে কী অফার করছেন, আপনি কীভাবে কোম্পানিকে উপকৃত করবেন, কীভাবে সেই পদ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধান করবেন সেদিকে আরও ফোকাস করুন।

অতিরিক্ত যোগ্যতা এবং এক্সট্রা কারিকুলার উল্লেখ:

নিয়োগের জন্য, নিয়োগ কর্মকর্তাগণ এমন প্রার্থীদের নির্বাচন করতে পছন্দ করেন, যাদের উক্ত চাকরির প্রতি আবেগ এবং আগ্রহ রয়েছে। আপনার একাডেমিক প্রকল্প, এক্সট্রা কারিকুলার এবং পদের সাথে প্রাসঙ্গিক অতিরিক্ত যোগ্যতা উল্লেখ করুন। কারণ এগুলো আপনার চাকরি পেতে বেশ সহায়ক হবে।

আর এগুলো নিয়োগকর্তার কাছে পদের প্রতি আপনার আগ্রহ এবং ইচ্ছা প্রকাশ করে। তাই কভার লেটারে আপনার প্রাসঙ্গিক একাডেমিক যোগ্যতা, এক্সট্রা কারিকুলার সুন্দরভাবে উল্লেখ করুন।

দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা হাইলাইট :

আপনি যদি দ্রুত চাকরি পেতে চান তাহলে সেই পদের সাথে সম্পর্কিত আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বিশেষভাবে কভার লেটারে তুলে ধরুন। তা যত ছোটই হোক না কেন।

এর কারণ হল নিয়োগকর্তারা নিয়োগ দানের ক্ষেত্রে দক্ষতাকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেন। ধরুন আপনি একটি ফ্যাশন ডিজাইন কোম্পানিতে চাকরি করবেন। তাহলে আপনার গ্রাফিক ডিজাইন সংক্রান্ত দক্ষতা সে কোম্পানিতে নিয়োগ পেতে খুবই সহায়ক হবে।

ব্যক্তিগত গুণাবলী এবং যোগ্যতা হাইলাইট :

আপনি যখন একটি কোম্পানিতে চাকরি / ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করবেন। তখন প্রথমে আপনাকে সেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিতে হবে এবং সেই পদে আপনার ব্যক্তিগত গুণাবলী এবং যোগ্যতা প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে লাভবান করবে তা খুঁজে বের করতে হবে। কারণ লাভ ছাড়া কাউকেই আপনাকে নিয়োগ দিতে চাইবে না।

তাই চাকরির আবেদনপত্র পাঠানোর আগে আপনার অনন্য গুণ এবং যোগ্যতা খুঁজে বের করতে হবে। যেমন: সময় ব্যবস্থাপনা, কোনো কিছু সহজে ব্যাখ্যা করার সক্ষমতা, কোনো কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত লেগে থাকার মানসিকতা। ভাল উপস্থাপন ক্ষমতা ইত্যাদি

অতিরিক্ত দক্ষতা উল্লেখ :

প্রতিটি কোম্পানির লক্ষ্য থাকে কম জনবল দিয়ে বেশি কাজ করানো। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা এক বিভাগের একজন কর্মচারীকে অন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে কাজ করতে বাধ্য করে।

সুতরাং আপনি যখন একটি চাকরির জন্য কভার লেটার পাঠাবেন, তখন তারা দেখতে চেষ্টা করবে যে আপনি উক্ত পদের সাথে সম্পর্কিত অন্যন্য কাজ করার জন্য দক্ষ কিনা। তাই কভার লেটারে, সুন্দর ভাবে আপনার পদের সাথে সম্পর্কিত অন্যন্য দক্ষতা গুলো উল্লেখ করুন।

সাফলতার গল্প উল্লেখ :

আপনি যদি ছাত্রাবস্থায় কোন সামাজিক সংগঠন / ছোট ব্যবসা বা অন্য কোন ধরনের সংগঠন তৈরি করেন। তাহলে আপনি কভার লেটারে সেই সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান তৈরির সাফল্যের গল্পটি সংক্ষেপে উল্লেখ করুন।

আত্মবিশ্বাস প্রকাশ :

আপনি যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার জন্য আপনি কেন যোগ্য তা কভার লেটারে আত্মবিশ্বাসের সাথে উল্লেখ করুন। নিয়োগকর্তাকে আশ্বস্ত করুন যে আপনি উক্ত পদের সমস্ত দায়িত্ব খুব ভালভাবে পালন করতে সক্ষম। এবং দৃঢ়ভাবে উক্ত পদ সম্পর্কে আপনার ইতিবাচক চিন্তা প্রকাশ করুন।

কিভাবে বাংলায় কভার লেটার লিখতে হয় :

কভার লেটার নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং নিজেকে সেরা এবং যোগ্য হিসাবে প্রমাণ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ প্রদান করে। সেজন্য আপনার একটি পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে যে কিভাবে একটি কভার লেটার লিখতে হয়।

কভার লেটার লেখার সময় প্রতিটি বাক্যের প্রারম্ভ বাম দিকে হওয়া উচিত।

প্রেরকের নাম এবং যোগাযোগের তথ্য:

কভার লেটারের শুরুতে আপনার নাম এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখতে হবে বা লেটারহেডে আপনার নাম এবং ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। যদি সিভি তে এই সব তথ্য দেওয়া থাকে তাহলে ইমেল, ফোন নাম্বার দিলেই যথেষ্ট। তবে বাংলা কভার লেটারে এই অংশটি না লিখলেও চলে।

তারিখ:

আপনার নাম এবং ঠিকানার পরে, একটি লাইন বাদ দিয়ে তারিখ লিখুন। আপনার স্বাক্ষরের তারিখ এবং এই তারিখ একই রাখার চেষ্টা করবেন।

নিয়োগকর্তার নাম এবং যোগাযোগের তথ্য:

তারিখ লেখার পরই এক লাইন বাদ দিয়ে নিয়োগকর্তার পুরো নাম ও পুরো ঠিকানা লিখতে হবে। এই ক্ষেত্রে সাধারণত নিয়োগ কর্তার পদবী এবং প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়।

বিষয়:

কভার লেটারে বিষয় লেখাটা ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। এটি লিখলেও চলে না লিখলেও চলে। যদি আপনি না লিখতে চান সেক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার নাম এবং যোগাযোগের তথ্য লিখে সরাসরি অভিবাদন লিখতে হবে।

অভিবাদন:

অভিবাদন লেখার সময় সঠিক ব্যক্তিকে তার সঠিক নাম বা উপাধি দিয়ে অভিবাদন জানাতে হবে। যেমন: প্রিয় (প্রথম নাম / মিস্টার মিসেস/ পদবী), জবাব অথবা মহাশয়।

মূল অংশ:

কভার লেটারের মূল অংশটি অভিবাদনের নিচ থেকে শুরু হয়। এই অংশে, আপনি যে উদ্দেশ্যে এই চিঠিটি লিখছেন তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এই অংশটি ২-৫ অনুচ্ছেদে রাখার চেষ্টা করতে হবে।

কভার লেটারের শুরুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রথম অনুচ্ছেদে কোন কোমন বাক্য ব্যবহার না করে, মনোযোগ আকর্ষণ করে এমন কিছু দিয়ে শুরু করুন।

আপনি কেন এই কাজের জন্য যোগ্য এবং কেন আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে সেই প্রসঙ্গে দ্রুত আসুন। যাতে আপনি শুরুতেই নিয়োগকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন।

কভার লেটার লেখার সময় পেশাদার মনোভাব বজায় রাখুন, সাহসী হোন এবং নিয়োগকর্তাকে বোঝানোর চেষ্টা করুন যে আপনি কাজের প্রতি আন্তরিক।

অতিরিক্ত চালাক হবেন না, নিজেকে পরিষ্কার রাখুন। জীবনবৃত্তান্তের সাথে কভার লেটারটি সামঞ্জস্য রাখুন। জটিল শব্দ এবং বড় বাক্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত, প্রচলিত এবং অর্থপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করুন। একই কথা বা বাক্য কভার লেটার বারবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

আপনার বিশেষ যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা লেখার সময় বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।

বানান এবং ব্যাকরণের উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখুন। এবং বানান ও ব্যাকরণ ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখুন।

সমাপ্তি:

এই অংশে “শুভেচ্ছা, বিনীত নিবেদক, আপনার বিশ্বস্ত”লেখার পরে আপনার স্বাক্ষর ও তারিখ। তারপর আপনাকে আপনার পুরো নাম লিখে কভার লেটারটি সম্পূর্ণ করতে হবে।

শেষ কথা :

সরকারি চাকরি যে অনলাইনে বা নির্দিষ্ট ফর্মের মাধ্যমে দরখাস্ত করতে হয় তাই সরকারি চাকরিতে কভার লেটারের প্রয়োজন হয় না। তবে বে সরকারি চাকরিতে নিজের যোগ্যতা গুলোকে একটু ভালভাবে উপস্থাপন করার জন্য কভার লেটারের প্রয়োজন হয়। তবে বেসরকারি চাকরিতে প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা আলাদা কভার লেটার ব্যবহার করা উচিত। একই কভার লেটার বারবার ব্যবহার করা উচিত নয়। সেজন্য আপনার চাকরির প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিভিন্ন পদের জন্য আলাদা কভার লেটার লেখার চেষ্টা করুন। যার জন্য আপনি আমাদের এই পোষ্টটির সহায়তা নিতে পারেন। আশা করি কভার লেটার কি? কভার লেটার লেখার নিয়ম এবং কিভাবে বাংলায় কভার লেটার লিখতে হয় সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা দিতে সক্ষম হয়েছি।

Leave a Comment