অফিসিয়াল চিঠি লেখার নিয়ম: চিঠি একসময় যোগাযোগের বহুল ব্যবহৃত মাধ্যম হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে কিছু আনুষ্ঠানিক কাজ ছাড়া এর ব্যবহার অতীতের তুলনায় এখন একদম নগণ্য। অফিসিয়াল বা আনুষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত চিঠি প্রাচীনকাল থেকেই দেশে প্রচলিত রয়েছে। অফিসিয়াল তথা আনুষ্ঠানিক চিঠির মধ্যে চাকরির কভার লেটার, ব্যবসায়িক চিঠি, পদত্যাগ পত্র, আইনি চিঠি, চাকরি স্থায়ীকরণের আবেদন পত্র, সুপারিশ পত্র চাকরি থেকে অব্যাহতি পত্র ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মানব সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে ব্যক্তিগত ও অফিসিয়াল তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যম গুলোরও অনেক উন্নত হয়েছে। ফলে চিঠির ব্যবহার আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে। এবং উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম ইমেল,ডিজিটাল মেসেজিং চিঠির স্থান দখল করে ফেলেছে। তবে মাধ্যম যাই হোক এই আলোচনায় আমরা বাংলায় অফিসিয়াল চিঠি লেখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার করার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
আরও পড়ুন :
অফিসিয়াল পত্র কাকে বলে?
অফিসিয়াল চিঠি মূলত একটি চিঠি বা আবেদন যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন পেশাদার কাজের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করে। অথবা কোন প্রতিষ্ঠান কোন ব্যক্তির সাথে অফিসিয়াল ভাবে যোগাযোগ করে। তাই অফিসিয়াল চিঠিকে আনুষ্ঠানিক চিঠিও বলা হয়।
অফিসিয়াল চিঠির উদাহরণ হল চাকরির জন্য আবেদন করা, অভিযোগ দায়ের করা, চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদন, আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানানো, কাউকে আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানানো ইত্যাদি।
অফিসিয়াল যোগাযোগের অন্যতম একটি মাধ্যম হল এই আনুষ্ঠানিক চিঠি। তবে অফিসিয়াল চিঠি সাধারণত ব্যক্তিগত চিঠির মত নয়। তাই অফিসিয়াল চিঠি লেখার সময়, তার আনুষ্ঠানিক টোন, লেখার ধরন, সংক্ষিপ্ততা, বিষয়বস্তুর স্বচ্ছতা, সঠিক বিন্যাস এবং মার্জিত উপস্থাপনার ইত্যাদির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হয়।
আবার প্রাপকের উপর নির্ভর করে অফিসিয়াল চিঠির টোনের ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হয়। সাধারণত, কভার লেটার, আইনি নোটিশ, আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানানো জন্য ইত্যাদি অফিসিয়াল চিঠির লেখার ধরণ ক্ষেত্র বিশেষে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
অফিসিয়াল চিঠি লেখার নিয়ম :
একটি সুলিখিত এবং পেশাদার অফিসিয়াল চিঠি লিখতে, আপনাকে চিঠিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আবশ্যই যোগ করতে হবে। যা আপনার পেশাদারিত্ব এবং প্রাপকের কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।
- প্রারম্ভ : অফিসিয়াল চিঠি লেখার সময়, প্রতিটি বাক্যের প্রারম্ভ বাম দিকে হওয়া উচিত।
- তারিখ : বাংলায় অফিসিয়াল চিঠি লেখার সময় সর্বপ্রথম আপনাকে তারিখ দিয়ে অফিসিয়াল চিঠি লেখা শুরু করতে হবে। এবং এই তারিখটি অবশ্যই আপনার করা স্বাক্ষরের তারিখের সাথে মিল থাকতে হবে।
- প্রাপকের নাম এবং যোগাযোগের তথ্য: তারিখ লেখার পর, একটি লাইন বাদ দিয়ে প্রাপকের পুরো নাম এবং সম্পূর্ণ ঠিকানা লিখতে হবে। তবে অফিসিয়াল পত্রে সাধারণত প্রাককের নামের পরিবর্তে তার পদবী এবং তার প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়।
- বিষয়: প্রাপকের নাম ও ঠিকানা লেখার পর আপনার চিঠির বিষয় স্পষ্ট ভাবে লিখতে হবে। তবে সব অফিসিয়াল পত্রে যে বিষয় থাকলে হবে বিষয়টি এমন হয়। এটি কাকে এবং কি বিষয়ে আনুষ্ঠানিক পত্র লিখছেন তার উপর নির্ভর করবে। সেই ক্ষেত্রে আপনি চাইলে প্রাপকের নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা লিখে সরাসরি অভিবাদন লিখতে পারেন।
- অভিবাদন: বাংলায় অফিসিয়াল চিঠিতে জনাব, মহোদয় বহুল ব্যবহৃত দুটি অভিবাদন। আপনি আপনার দরখাস্তের এর যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এগুলো ভিন্ন যদি অন্য কিছু ব্যবহার করতে চান তাহলে অভিবাদন লেখার সময় সঠিক ব্যক্তিকে তার সঠিক নাম বা উপাধি দিয়ে অভিবাদন জানাতে হবে। যেমন: প্রিয় (প্রথম নাম / শেষ নাম)।
- মূল অংশ: আনুষ্ঠানিক চিঠির মূল অংশটি অভিবাদনের নিচ থেকে শুরু হয়। এই অংশে, আপনি যে উদ্দেশ্যে এই চিঠিটি লিখছেন তা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এই অংশটি ২-৫ অনুচ্ছেদে রাখার চেষ্টা করুন।
- ভূমিকা অনুচ্ছেদ: প্রারম্ভিক অনুচ্ছেদে, প্রাপককে আপনার পরিচয় এবং চিঠি লেখার কারণ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দিতে হবে।
- মূল অনুচ্ছেদ: প্রারম্ভিক অনুচ্ছেদের পর আপনাকে এই চিঠিটি লেখার উদ্দেশ্য বা কারণ বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করতে হবে। আপনি চাইলে এটি আদালা অনুচ্ছেদেও লিখতে পারেন অথবা প্রথম অনুচ্ছেদের সাথেও লিখতে পারেন।
- শেষ অনুচ্ছেদ: শেষ অনুচ্ছেদে, প্রাপককে আপনার চিঠিটি গ্রহনের জন্য আনুরোধ করবেন। এবং কিছু কিছু অফিসিয়াল চিঠির ক্ষেত্রে পত্র লেখার কারণটি আবার স্মরণ করিয়ে দিবেন এবং প্রয়োজনে কল টু অ্যাকশন বাক্য ব্যবহার করবেন।
- সমাপ্তি: এই অংশে “শুভেচ্ছা, আপনার বিশ্বস্ত, বিনীত নিবেদন” ইত্যাদি লেখার পরে আপনার স্বাক্ষর। তারপর আপনাকে আপনার পুরো নাম (সংস্থা এবং পদের নাম) ও ঠিকানা লিখে আনুষ্ঠানিক চিঠিটি সম্পূর্ণ করতে হবে।
অফিসিয়াল চিঠি লেখার উদাহরণ :
উদাহরণ ০১ – ব্যবসায়িক চিঠি :
২০ শে আগস্ট ২০২… ইং
গগন পাল,
ব্যবস্থাপক,
কখগ প্রযুক্তি শিল্প
মিরপুর, ঢাকা।
জনাব পাল,
আমরা আপনাকে জানাতে পেরে আনন্দিত যে 16ই সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় আপনার প্রস্তাবটি আসন্ন আর্থিক বছরের জন্য এই কোম্পানিতে ইন্টারনেট পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য নির্বাচিত হয়েছে। সকলেই আপনার প্রস্তাবে উল্লেখিত বিবরণে সন্তুষ্ট ছিলেন। আমরা আপনার সাথে এক বছরের জন্য এই চুক্তি সম্পাদন করতে চাই।
আপনার সাথে চুক্তি সম্পাদন করার জন্য আপনার নিকট আমাদের কোম্পানি থেকে একজন প্রতিনিধি পাঠাব। আপনি যেমন উল্লেখ করেছেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে মূল্যই নির্ধারণ করা হবে। এবং পুরো টাকা তিন কিস্তিতে পরিশোধ করা হবে। প্রথম কিস্তি চুক্তির তারিখে পরিশোধ করা এবং বাকি দুটি বিভিন্ন সময়ে দুই মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে।
যেহেতু আপনার কোম্পানি উন্নত মানের পরিষেবার জন্য পরিচিত, তাই আমদের আপনার পরিষেবাগুলিতে পূর্ন আস্থা থাকবে ৷
আপনার বিশ্বস্ত,
আহমেদ সাখোয়াত
ব্যবস্থাপক
কখগ গ্রুপ
মিরপুর ঢাকা।
উদাহরণ ০২ – চাকরির আবেদন পত্র :
উদাহরণ ০৩ – সরকারি চিঠি :
শেষ কথা :
অফিসিয়াল চিঠির বিভিন্ন ধরনের প্রকার রয়েছে। এবং তাদের প্রত্যেকের একটি নির্দিষ্ট লেখার কাঠামো রয়েছে। তবে সাধারণ ভাবে মোটামুটি প্রায় সব ধরনের বাংলা অফিসিয়াল বা আনুষ্ঠানিক চিঠি একটি প্রধান গঠন অনুসরণ করা হয়। আর সেই আলোকেই এই আলোচনায় আমরা বাংলায় অফিসিয়াল চিঠি লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি এই বিষয়ে আপনারা একটি স্পষ্ট ধারণা পেয়েছেন। এই দরকারি সব পোস্ট ও টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।