আপনাকে ব্যবস্থাপক, সুপারভাইজার, প্রতিষ্ঠান প্রধান বা বিভাগীয় প্রধান হিসাবে বিভিন্ন সময় আপনার অধীনস্থদের জন্য বা আপনার ছাত্রদের জন্য সুপারিশ পত্র লেখার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ আপনার অধীনস্থরা বিভিন্ন সময়ে চাকরি পরিবর্তন করবে এবং নতুন চাকরিতে যোগদানের সময় আপনার কাছ থেকে একটি সুপারিশ পত্র চাইবে। আবার আপনি কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান বা বিভাগীয় প্রধান হলে আপনার ছাত্ররা বাহিরে উচ্চ শিক্ষার গ্রহণের সময় আপনার নিকট সুপারিশ পত্র চাইবে। তাই, আপনার অধীনস্থ বা শিক্ষার্থীদের জন্য কিভাবে সুপারিশ পত্র লিখতে হয়, সুপারিশ পত্রে কি কি উপাদান যোগ করতে হয় এবং আধুনিক সুপারিশ পত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে আপনাকে বিশেষ ভাবে অবগত থাকতে হবে।
সুপারিশ পত্র কি?
সুপারিশ পত্র হল একটি অফিশিয়াল চিঠি যা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য, কাজের প্রতি আগ্রহ, যোগ্যতা, সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে। এটি রেফারেন্স লেটার হিসাবেও পরিচিত। চাকরির আবেদন পত্র বা দরখাস্ত এর সাথে পাঠানো একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হল সুপারিশ পত্র। নতুন চাকরি পেতে এটি বেশ সহায়তা করে।
চাকরির বায়োডাটা এবং জীবনবৃত্তান্ত দেখে একজন প্রার্থীর যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা জানা গেলেও পূর্ববর্তী চাকরিতে তার কর্মদক্ষতা, তার ভূমিকা এবং তার অবস্থান সম্পর্কে পুরোপুরি জানা যায় না। যার জন্য একটি সুপারিশ পত্রের প্রয়োজন হয়। আর সুপারিশ পত্রের মাধ্যমে নিয়োগপ্রর্থীর আগের প্রতিষ্ঠানে কেমন ছিলেন, তার কর্মবৈশিষ্ট্য কি ছিল, কাজের প্রতি তার আগ্রহ ও বিশেষ যোগ্যতা কি ছিল, সহকর্মীদের সঙ্গে তার আচরন কেমন ছিল ইত্যাদি সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়।
একই ভাবে উচ্চশিক্ষার জন্যও একটি সুপারিশ পত্র বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আপনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের যোগ্য কিনা সেটিও মূলত সুপারিশ পত্রের মাধ্যে নির্ধারন করা হয়।
সুপারিশ পত্র লেখার নিয়ম :
সুপারিশ পত্র সাধারণত বিভিন্ন কাজে লেখার প্রয়োজন হয়। তবে যেহেতু এটি আনুষ্ঠানিক চিঠি সেহেতু মূল ফরমেট প্রায় একই। অর্থাৎ সকল সুপারিশ পত্র প্রায় একই নিয়ম অনুসরণ করে লেখা হয়। তারা ভিন্ন ভিন্ন সুপারিশ পত্রের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সুপারিশ পত্র লেখার নিয়ম জানার প্রয়োজন হয় না। এই আলোচনায় আমরা উদাহরন হিসাবে চাকরির সুপারিশ পত্র লেখার নিয়ম দেখব। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
চাকরির সুপারিশ পত্র :
একটি রেফারেন্স লেটার বা সুপারিশ পত্রের প্রতিটি শব্দ একজন নিয়োগকর্তা, ব্যবস্থাপক বা সুপারভাইজার এর কাছে খুবই সংবেদনশীল। তাই রেফারেন্স লেটার লেখার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ:
আপনি যখন কারো জন্য একটি সুপারিশ পত্র লিখবেন, তখন তার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এবং অর্জন ইত্যাদি তথ্য আপনার প্রয়োজন হতে পারে।
যদিও তিনি আপনার অধীনে দীর্ঘদিন কাজ করে, তবুও আপনার অধীনস্থের সমস্ত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা জানা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আপনি যখন কারো জন্য একটি রেফারেন্স লেটার লেখেন, তখন আপনাকে অবশ্যই তাদের কাছে একটি আপডেটেড সিভি চেয়ে নিতে হবে।
এছাড়াও, রেফারেন্স লেটার লেখার সময় আপনার যদি অন্য কোনো তথ্য জানার প্রয়োজন হয়, তাহলে আপনার প্রাক্তন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসা করে তা জেনে নিতে হবে। যেমন: চাকরির বিজ্ঞপ্তি, আবেদনকৃত পদের কাজের বিবরণ, নিয়োগকারী ম্যানেজারের নাম ইত্যাদি।
এবং সবসময় অনুমানের উপর কিছু লেখা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে অন্য নিয়োগকারী কর্মকর্তার কাছে খর্ব করতে পারে।
সঠিক বিন্যাস নির্বাচন :
সুপারিশ পত্র লেখার আগে, আপনাকে এর সঠিক বিন্যাস নির্বাচন করতে হবে। রেফারেন্স লেটার লিখতে সর্বদা অফিশিয়াল চিঠির বিন্যাস ব্যবহার করুন।
প্রথমে আপনার পুরো নাম এবং যোগাযোগের ঠিকানা লিখুন, যদি আপনি নিজস্ব প্যাডে সুপারিশ পত্র লেখেন তাহলে এটি লেখার প্রয়োজন নেই।
তারপর তার নীচ তারিখ, তারপর নিয়োগকারী কর্মকর্তার নাম এবং যোগাযোগের ঠিকানা লিখুন।এবং আপনি যদি ইমেলের মাধ্যমে সুপারিশ পত্র প্রেরণ করেন তবে বিষয় অংশে আপনার অধীনস্তের নাম উল্লেখ করে বলুন যে এটি তার জন্য একটি সুপারিশ পত্র।
তারপরে “প্রিয় (প্রথম নাম/ লাস্ট নেম) অথবা নিয়োগ কর্তার পূর্ন নাম লিখুন এবং তারপর চিঠির মূল বিষয় লিখতে শুরু করুন।
শুভেচ্ছা/অভিবাদন জানানোর পর, আপনি প্রার্থীকে কতদিন ধরে চেনেন, কর্মক্ষেত্রে তার যোগ্যতা, তার দক্ষতা ও অর্জন, প্রার্থীর সামাজিক মূল্যবোধ, সহকর্মীদের প্রতি তার আচরন, দায়িত্ববোধ সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করুন।
রেফারেন্স লেটারে প্রার্থীর বিশেষ বিশেষ সক্ষমতা ও দক্ষতা তুলে ধরুন। যেগুলো তাকে একজন ব্যতিক্রমী কর্মচারী করে তোলে। তবে এটি লক্ষ্য রাখবেন যে আপনি আপনার প্রাক্তন অধস্তন সম্পর্কে যা বলছেন তা যেন প্রাসঙ্গিক হয়। চাকরির সাথে অপ্রাসঙ্গিক, অস্বাভাবিক কোনো যোগ্যতা, দক্ষতা এবং অর্জন উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকুন।
চিঠির শেষ অংশে, প্রাক্তন কর্মচারী সম্পর্কে আপনি কতটা আত্মবিশ্বাসী এবং আপনি কেন তাকে এই পদের জন্য সুপারিশ করবেন সে সম্পর্কে কিছু কথা বলুন। এবং যদি আপনার প্রাক্তন অধস্তন সম্পর্কে তার কোন প্রশ্ন থাকে তবে তাকে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করুন।
আপনার সম্পূর্ণ যোগাযোগের তথ্য:
এরপরে আপনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য রেফারেন্স চিঠিতে আপনার সম্পূর্ণ যোগাযোগের তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না। যাতে নিয়োগকারী কর্মকর্তার আপনার প্রাক্তন কর্মচারী সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে খুব সহজেই আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
যদি সুপারিশ পত্র ইমেইলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। তাহলে আপনাকে অবশ্যই রেফারেন্স লেটারে একটি ভেলিড ইমেল ঠিকানা উচিত। কারণ, আপনার অধস্তন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে, তারা ইমেলের মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে।
শেষ কথা :
অফিসিয়াল পত্র গুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ন পত্র হচ্ছে সুপারিশ পত্র। এই আলোচনায় আমরা কেবল মাত্র চাকরির সুপারিশ পত্র লেখার নিয়ম নিয়েই আলোচনা করলাম। অন্য কোন পোস্টে হয়তো ভবিষ্যতে অন্য সুপারিশ পত্র লেখার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। আশা করি যা আলোচনা করলাম তা থেকে সুপারিশ পত্র সম্পর্কে আপনাদের একটি স্টং ধারণা হয়েছে। এই দরকারী সব নিউজ, পোস্ট ও টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।