দেশে শিক্ষাখাত দ্রুত উন্নতি করায় এর প্রভাব গ্রাম থেকে শুরু করে শহর নগর সর্ব ক্ষেত্রেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার ফলে দেশে বিশাল এক শিক্ষিত শ্রম শক্তি গড়ে উঠেছে। তবে দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে দেশে এই বিশাল শিক্ষিত সমাজের একটি বড় অংশ এখন পর্যন্ত ভালোভাবে বাংলা চাকরির আবেদন পত্র লিখতে বা সঠিকভাবে লেখার নিয়ম জেনে না।ফলে তারা শিক্ষিত হলেও প্রতিযোগিতা পূর্ন চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার যে উন্নতি লক্ষ্য করার কথা ছিল তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে চাকরির আবেদন পত্র, সিভি, কভার লেটার, বায়োডাটা ইত্যাদির ব্যাপারে খুব বেশি শিক্ষা দেওয়া হয় না। যার কারণে চাকরির বাজারে তারা ঠিকমত প্রতিযোগিতা করতে পারেনা। এই আলোচনায় আমরা সরকারি বেসরকারি চাকরির বাংলা আবেদন পত্র লিখার আধুনিক নিয়ম, ফরম্যাট এবং নমুনা তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আমাদের সাথেই থাকুন।
আরও পড়ুন : দরখাস্ত লেখার নিয়ম ও নমুনা ২০২৪ [Updated নিয়ম]
চাকরির আবেদন পত্র কি?
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহৃত পত্র গুলো সাধারণত ২ প্রকার। ১. ব্যক্তিগত পত্র ২. ব্যবহারিক বা অনুষ্ঠানিক পত্র। চাকরির আবেদন পত্র মূলত ব্যবহারিক পত্রের অন্তর্গত। কোন প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের নিকট একটি সুনির্দিষ্ট গঠন কাঠামো ও নিয়ম অনুসরণ করে চাকরির জন্য যে আবেদন পত্র প্রেরন করা হয় তাই মূলত চাকরির আবেদন পত্র।
বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের কারণে চাকরির আবেদন পত্র অনলাইন এবং আফলাইন উভয় মাধ্যমেই প্রেরন করা যায়। বর্তমানে সরকারি চাকরিতে আবেদন সহ অধিকাংশ কোম্পানিতে নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করার মাধ্যমে আবেদন পত্র প্রেরন করা যায়। আবার ইমেইলের মাধ্যমেও আবেদন পত্রের সফ্ট কপি খুব সহজে এবং দ্রুত তম সময়ে কোম্পানির নিকট প্রেরন করা যায়।
আরও পড়ুন :
সরকারি চাকরির আবেদন ফর্ম :
যদিও এই বিষয়টি এই আর্টিকেলটির সাথে সরাসরি প্রাসঙ্গিক নয়। তবে পরোক্ষ ভাবে এই বিষয়টি সম্পিক্ত বলে এখানে আমরা এই সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করছি। বর্তমানে অধিকাংশ চলমান সরকারি চাকরির নিয়োগ গুলোতে আবেদন পত্র প্রেরণের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এখন প্রায় সকল সরকারি চাকরিতে আবেদন করার জন্য অনলাইনে আবেদন পত্র পূরণ করতে হয়। যদিও সরকারি চাকরির আবেদন মোবাইল দিয়ে খুব সহজেই করা যায়।
তবুও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় নিয়োগ, বিআরটিসি নিয়োগ সহ বেশ কিছু চাকরিতে ক্ষেত্রে এখনো স্বহস্তে আবেদন ফর্ম পূরণ করে নির্দিষ্ট ঠিকানায় প্রেরন করতে হয়। সে জন্য ওই সব চাকরির আবেদন করার বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারি চাকরির আবেদন ফর্ম ডাউনলোড ঠিকান নিচে দিয়ে দিলাম।
চাকরির আবেদন পত্র লেখার নিয়ম বাংলা :
বাংলা চাকরির আবেদন পত্র লেখার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হয়। কেননা সুনির্দির্ষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ না করলে, অনেকাংশেই আবেদন পত্রটি অকার্যকর বা অগ্রহণ যোগ্য বা অপেশাদার হিসেবে বিবেচিত হয়ে যাতে পারে। শুধু আবেদন পত্রের ক্ষেত্রেই নয় এর সাথে সম্পর্কিত বাংলা সিভি লেখার নিয়ম অথবা চাকরির বায়োডাটা লেখার নিয়ম-এর ক্ষেত্রেও সুনির্দির্ষ্ট গঠন পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।
একটি ব্যবহারিক বা অনুষ্ঠানিক পত্রের দুটি অংশ থাকে।
- শিরোনাম বা বাহিরের অংশ।
- পত্রগর্ভ বা ভেতরের অংশ।
আবেদন পত্রের পত্রগর্ভ লেখার নিয়ম:
যে কোন ধরণের পত্রের মূল অংশকে মূলত বলা হয় পত্রগর্ভ। চাকরির আবেদন পত্র লিখার জন্য পত্রগর্ভে সাধারণত পাঁচটি অংশ থাকে।
- তারিখ : চাকরির আবেদন পত্রটির একদম শুরুতেই বা পাশে আবেদনপত্রটি লেখার তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
- প্রাপকের নাম, পদবী ও ঠিকানা : তারিখ লিখার পর একলাইন বাদ দিয়ে ‘বরাবর’ লিখে তার নিচ থেকে প্রাপকের নাম, পদবী ও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা লিখতে হবে।
- বিষয় : প্রাপকের নাম, পদবী ও ঠিকানা লিখার পর যে পদে আবেদন করবেন তা উল্লেখ পূর্বক পত্রের বিষয় লিখতে হবে।
- সম্ভাষণ : প্রাপকের নাম, পদবী ও ঠিকানা লিখার পর একলাইন বাদ দিয়ে সম্ভাষণ (মহোদয়, জনাব, মহাশয়, ইত্যাদি) লিখতে হবে। তবে চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে ‘জনাব’ সম্বোধনটি ব্যবহার করাই উত্তম।
- মূল বক্তব্য : সম্ভাষণের নিচ থেকেই আবেদন পত্রের মূল বক্তব্য বিষয় স্পষ্ট ভাবে সর্বোচ্চ তিন প্যারার মধ্যে সংক্ষিপ্ত ভাবে লিখতে হবে। এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্যাদি যেমন আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা অভিজ্ঞতা ইত্যাদি মূল বক্তব্যের নিচে যোগ করতে হবে।
- প্রেরকের নাম ও স্বাক্ষর : পত্রের শেষে ‘বিনীত নিবেদক অথবা নিবেদক’ লিখে প্রেরক বা আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা লিখে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে আবেদন পত্র লিখা সমাপ্ত করতে হবে।
আবেদন পত্রের শিরোনাম লেখার নিয়ম :
আবেদন পত্রের পত্রগর্ভ বা ভেতরের অংশ লিখা শেষ হলে আবেদনপত্রটি একটি সুন্দর ফর্মাল খামের মধ্যে রেখে শিরোনাম অংশটি লিখতে হবে। এই ক্ষেত্রে বাম পাশে প্রেরকের ঠিকানা এবং ডান পাশে প্রাপকের ঠিকানা লিখতে হবে। প্রাপকের ঠিকানা লিখার সময় সম্বোধন সূচক ‘জনাব’ শব্দটি ব্যবহার করতে হবে।
বাংলা চাকরির আবেদন পত্রের কাঠামো :
তারিখ
বরাবর
কর্তৃপক্ষের নাম
ঠিকানা
বিষয়:
জনাব/অন্য সম্ভাষণ,
স্পষ্টভাবে এক অথবা সর্বোচ্চ তিন প্যারা মধ্যে আবেদণের মূল বিষয়টি উল্লেখ করতে হবে।
বিনীত, নিবেদক
আবেদনকারীর নাম
ঠিকানা
সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন পত্রের নমুনা :
তারিখ-০১/১০/২০২৩ খ্রিঃ
বরাবর
প্রধান শিক্ষক / সম্পাদক
আব্দুর রহিম উচ্চ বিদ্যালয়
নগরপুর , টাঙ্গাইল।
বিষয়ঃ সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
জনাব,
যথাবিহিত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, গত ০১/১০/২০২৩ ইং তারিখে প্রকাশিত ‘দৈনিক ইত্তেফাক’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মারফত জানতে পারলাম যে, আপনার বিদ্যালয়ে একজন অভিজ্ঞ সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হবে। আমি উক্ত পদের জন্য একজন প্রার্থী। নিম্নে আমার পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত আপনার সমীপে পেশ করলাম।
১। নাম: আলামিন হোসেন।
২। পিতার নাম: আব্দুল কাদের মিঞা।
৩। মাতার নাম: কানিজ ফাতেমা।
৪। বর্তমান ঠিকানা: গ্রাম- তেবাড়িয়া; ডাকঘর- সলিমবাদ; থানা- নাগরপুর; জেলা- টাঙ্গাইল।
৫। স্থায়ী ঠিকানা: ঐ
৬। জন্ম তারিখ: ২১/০৬/১৯৯৪ ইং।
৭। জাতীয়তা: বাংলাদেশী।
৮। জাতীয় পরিচয় পত্র নং: ১২৩৪৫৬৭৮৯০
৯। ধর্ম: ইসলাম
১০। মোবাইল নাম্বার: +৮৮০১২৩৪৫৬৭৮৯০
১১। শিক্ষাগত যোগ্যতা:
পরীক্ষার নাম | গ্রুপ/বিষয় | বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় | পাশের সন | প্রাপ্ত গ্রেড |
এসএসসি | বিজ্ঞান | ঢাকা | ২০১০ | জিপিএ-৫ |
এইচএসসি | বিজ্ঞান | ঢাকা | ২০১২ | জিপিএ-৫ |
বিএ | বাংলা | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | ২০১৬ | প্রথম শ্রেণী |
এমএ | বাংলা | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় | ২০১৭ | প্রথম শ্রেণী |
১০। অভিজ্ঞতা: ২০২০ ইং সন হতে একটি জুনিয়র স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসাবে শিক্ষকতা করে আসছি।
অতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন এই যে, উপরোক্ত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে উক্ত পদের নিয়োগ করলে কৃতার্থ হব।
বিনীত নিবেদক
স্বাক্ষর
আল আমিন
মোবাঃ +৮৮০১২৩৪৫৬৭৮৯০
চাকরির আবেদন পত্রের ছবি :
চাকরির আবেদন পত্র pdf :
আপনি চাইলে চাকরির আবেদন পত্রের পিডিএফ কপি সংরক্ষণ করে থাকতে পারেন। যার ফলে আবেদন পত্র লেখার সময় আপনাকে আর বিভিন্ন সাইট থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে না। এই pdf দেখেই খুব সহজে চাকরির আবেদন পত্র লিখতে পারবেন। চাকরির আবেদন পত্র pdf
শেষ কথা :
পরিশেষে বলতে চাই, চাকরি জন্য আবেদন পত্রকে পেশাদার উপায়ে লেখার জন্য এর সুনির্দিষ্ট নিয়ম মানার পাশাপাশি পত্রের ভাষা সহজ, সরল, প্রাঞ্জল এবং বোধগম্য হতে হবে। পত্র সবসময় সংক্ষিপ্ত হতে হবে। পাশাপাশি বানান এবং সাধু চলিতের মিশ্রমের বিষয়ে নজর দিতে হবে।