যে কোন চাকরিতে আবেদন করার ক্ষেত্রে চাকরির আবেদন পত্র এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হলো সিভি। সিভির মাধ্যমে আপনি আপনার প্রফেশনাল যোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ইত্যাদি গুলো উপস্থাপন করতে পারেন। এটি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, সাধারণ তথ্য, কাজের অভিজ্ঞতা, এবং আপনার উদ্দীপনা ও আগ্রহ ব্যক্ত করতে সাহায্য করে। সিভি বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষায় লিখা যায়। তবে সিভি লিখার সময় ইংরেজি সিভি লিখার নিয়ম অথবা বাংলা সিভি লেখার সর্বশেষ নিয়ম গুলোর উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এবং সিভি যাতে পেশাদার এবং প্রোফেশনাল মানের হয় সে দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। এই আলোচনায় আমরা সিভি কি, সিভির গুরুত্ব, সিভির ফরমেট এবং আধুনি বাংলায় আধুনিক সিভি লেখার নিয়ম ইত্যাদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি এই পোস্ট সিভি নিয়ে আপনার সব চিন্তা দূর করতে সক্ষম হবে।
আরও পড়ুন :
- দরখাস্ত লেখার নিয়ম ২০২৩
- মোবাইলে সরকারি চাকরির আবেদন করার নিয়ম
- সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কি কি কাগজ জমা দিতে হয়
সিভি (Curriculum Vitae) কি?
সিভি হলো Curriculum Vitae বা Resume সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি হলো আপনার পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনের সমস্ত তথ্যের সংক্ষিপ্ত রূপ। সিভি মূলত কোন কোম্পানির নিয়োগকর্তা আপনার চাকরির সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় দেখে থাকে। এটি নিয়োগ কর্তার কাছে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, ব্যক্তিগত তথ্য এবং অন্যান্য কাজ সম্পর্কিত তথ্য গুলো সংক্ষেপে উপস্থাপন করে।
সাধারণভাবে কোন প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য অথবা আপনাকে নিয়োগ দানের পূর্বে প্রাথমিক ভাবে মূল্যায়নের করতে সিভি বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই সিভি তৈরি করার সময়, আপনাকে নিজের যোগ্যতা ও সৃজনশীলতা মাধ্যমে নিয়োগকর্তাদের উপর প্রভাব তৈরী করতে চেষ্টা করতে হবে।
আরও পড়ুন : চাকরির আধুনিক বায়োডাটা লিখার নিয়ম
বাংলায় সিভি লেখার ফরমেট:
আধুনিক বাংলা সিভি লেখার নিয়ম এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে সিভির সঠিক ফরমেট। ইংরেজি সিভির ফর্মেটের সাথে বাংলা সিভির ফরমেটের বেশ পার্থক্য রয়েছে। তবে নিয়োগ প্রার্থীদের পেশাদার সিভি লেখার জন্য সাধারণ একটি ফরম্যাট নিম্নোক্ত ভাবে হতে পারে:
[পেশাদার পদবী (যদি থাকে )]
[ঠিকানা]
[যোগাযোগের তথ্য]
[জন্ম তারিখ]
[জন্মস্থান]
[উদ্দেশ্য (প্রযোজন অনুযায়ী)]
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
– [ডিগ্রি/সার্টিফিকেট নাম], [শিক্ষাগত প্রতিষ্ঠানের নাম], [শিক্ষাবর্ষ]
কাজের অভিজ্ঞতা:
– [পদের নাম], [কোম্পানির নাম], [সময়কাল]
দক্ষতা ও বিশেষ কাজ:
– [দক্ষতা/বিশেষ কাজ], [সময়কাল]
অন্যান্য ব্যক্তিগত গুণ ও বিশেষ দক্ষতা:
– [গুণ ও বিশেষ দক্ষতা সম্পর্কিত তথ্য]
[উদ্যোগ/সাফল্যের ঘটনা (যদি থাকে)]
রেফারেন্স
– [নাম], [কার্য পদবী], [কোম্পানির নাম], [যোগাযোগের ঠিকানা]
চাকরির ক্ষেত্রে বাংলা সিভির একটু এডভান্স ফরমেট হিসাবে নিচের ছবির ফরমেটটি বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়।
তবে বাংলয় সিভি লেখার সময়, আপনি নিজের তথ্য এবং ক্যারিয়ার বিষয়ে সঠিক তথ্য এবং সুপারিশকারী তথ্য (যদি থাকে) উল্লেখ করতে কখনোই ভুল করবেন না। কারণ এটি আপনার সিভির একটি নেগেটিভ দিক হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
আধুনিক বাংলা সিভি লেখার নিয়ম:
সিভি হচ্ছে একজন চাকরি প্রার্থীর রিপ্রেজেন্টটেটিভ। তাই সিভির মধ্যে অবশ্যই পেশাদার মনোভাবটি থাকতে হবে। এই কারণে একটি আধুনিক বাংলা সিভি লেখার সময়, নিম্নলিখিত নিয়ম কানুন গুলো অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত:
সংক্ষিপ্ত ভাবে তথ্য প্রদান করুন:
সিভি লিখার সময় সিভিটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু প্রভাবশালী করতে গুরুত্বপূর্ন তথ্য গুলো প্রদান করা উচিত। লেখার সময় ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন ঠিকানা, যোগাযোগের তথ্য, এবং অভিজ্ঞতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা পরিমার্জিত এবং পেশাদার ভাবে উপস্থাপন করা উচিত।
স্বচ্ছ এবং আকর্ষণীয় লেআউট ব্যবহার করুন:
আপনার সিভি লেখার সময়, একটি স্বচ্ছ এবং আকর্ষণীয় লেআউট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এবং সিভি লিখার সময় বিভাজন অর্থাৎ, শিরোনাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, রেফারেন্স ইত্যাদি সেকশন দিয়ে স্পষ্টভাবে সিভিকে সাজান।
গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট গুলোর উপর ফোকাস করুন:
সিভি লেখার সময়, আপনার প্রধান গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট গুলোর উপর বেশি ফোকাস করার চেষ্টা করুন। যেমন, আপনার শিক্ষকগত যোগ্যতার চেয়ে অভিজ্ঞতা বেশি হলে অভিজ্ঞতাকে হাইলাইট করার চেষ্টা করুন। অথবা কোন প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পদে যোগ দিতে চাইলে সে ক্ষেত্রে, প্রযুক্তি দক্ষতা, প্রযুক্তির জ্ঞান এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রকল্পের বিবরণ বিশেষ ভাবে উল্লেখ করুন।
দক্ষতা এবং কর্ম উদ্যোগ গুলো যুক্ত করুন:
সিভি লেখার সময়, আপনি আপনার দক্ষতা এবং আপনার বিভিন্ন কর্ম উদ্যোগ গুলো প্রকাশ করার চেষ্টা করুন। সম্ভাব্য নিয়মিত প্রকল্পের তালিকা, স্কিল, এবং অর্জিত অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করার চেষ্টা করুন।
অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকুন:
আপনার সিভি লেখার সময়, আপনার অতিরিক্ত ব্যক্তিগত তথ্য উপাত্ত উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করুন। যেমন, আমি এই ফল খেতে ভালোবাসি, আমি ঘুরতে এবং মুভি দেখতে ভালোবাসি ইত্যাদি। এই ধরণের ব্যক্তিগত তথ্য আধুনিক এবং পেশাদার সিভি তৈরী করার জন্য উপযুক্ত নয়।
যোগাযোগের তথ্য আপডেট করুন:
আধুনিক সিভি লেখার সময়, আপনার যোগাযোগের তথ্য গুলো উল্লেখ করার সময় আপডেট তথ্য গুলো উল্লেখ করতে ভুলবেন না।যেমন, যোগাযোগের ঠিকানা, ইমেল ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট ইত্যাদি।
স্পষ্টতা ও প্রোফেশনালিজম মেনে চলুন:
চাকরির জন্য আপনার সিভিটি একটি স্পষ্ট ডকুমেন্ট হওয়া উচিত। যাতে যারা আপনাকে নিয়োগ দিবে, তাদের আপনার সিভি পড়তে অসুবিধা না হয় এবং আপনার যোগ্যতা এবং আপনাকে অনুধাবন করতে সুবিধা হয় । এছাড়াও কার্যকর সিভি লেখার সময় আপনার প্রফেশনাল মনোভাব এবং অনুভূতি সঠিকভাবে প্রকাশ করার চেষ্টা করুন।
স্পেশাল দক্ষতার দিকে ফোকাস করুন:
চাকরির জন্য আধুনিক সিভি তৈরি করার সময়, সংশ্লিষ্ট চাকরি সম্পর্কিত আপনার যদি কোন স্পেশাল দক্ষতা এবং বিশেষ যোগ্যতা থাকে তাহলে সে গুলোকে ফোকাস করতে চেষ্টা করুন। যেমন : আপনার যদি বিভিন্ন ভাষায় বা কম্পিউটারে দক্ষতা থাকে তাহলে তা সিভিতে মেনশন করুন। এই ধরণের দক্ষতা গুলো আপনার চাকরি পাইতে বেশ সাহায্য করে। এছাড়াও এগুলো সিভির পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি করে।
মার্জিত ভাষা ব্যবহার করুন:
সিভি লেখার সময় বা সিভি তৈরি করার জন্য মার্জিত বাক্য ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। চাকরির সাথে অধিক প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ন তথ্য গুলো প্রচলিত বা অঞ্চলিক ভাষার পরিবর্তে মার্জিত এবং প্রফেশনাল স্বরে লিখার চেষ্টা করুন।
আধুনিক ফরমেটের ব্যবহার:
একটি কার্যকর এবং পেশাদার সিভি লিখার সময় বর্তমান সময়ে প্রচলিত আধুনিক ফরমেট ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এই ক্ষেত্রে আপনি ইংরেজি সিভির নমুনা গুলো থেকে ধারণা নিয়ে সেটি সৃজনশীল উপায়ে বাংলা সিভিতে প্রয়োগ করতে পারেন।
পেশাদারীত্ব বজায় রাখুন:
বাংলা সিভি লেখার সময়, প্রোফেশনালিজমতা মেনে চলুন। লেখার সময় ভাষা, শব্দ, বিন্যাস, ব্যবহার এবং স্টাইলে প্রফেশনাল মনোনিবেশ রাখুন। সিভির ভাষা একদম সহজ এবং সংক্ষেপ হতে পারে, কিন্তু সেটি অবশ্যই যত্ন সহকারে সাজানো গোছানো ভাবে উপিস্থাপন করা উচিত। যাতে এটি আপনার ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য নিয়োগ কর্তার উপর ভাল প্রভাব তৈরী করতে পারে।
চাকরির ক্ষেত্রে সিভির গুরুত্ব :
সিভি সাধারণত চাকরির আবেদন পত্র এর সাথে প্রেরণ করতে হয়। এটি আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা প্রদর্শনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট , যা আপনার পেশাগত জীবন শুরু করতে একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।
যে কোন নিয়োগকর্তা উপযুক্ত কর্মচারী নির্বাচন করার সময় সিভিতে তাদের উল্লেখিত অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা, দক্ষতা ইত্যাদিকে মূল্যায়নের মাপকাঠি হিসাবে ব্যবহার করে। তাই বাংলা সিভি লিখার সময় অবশ্যই অবশ্যই বাংলা সিভি লেখার নিয়ম গুলোর উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
পেশাগত প্রয়োজনীয়তা:
সিভি আপনার পেশাগত যোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা প্রদান করে। এটি যে কোন প্রতিষ্ঠানে আপনার নিয়োগ পাওয়ায় বিষয়টি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিয়োগকর্তাকে আপনার সম্পর্কে এই ম্যাসেজ প্রদান করে যে আপনি সেই প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তি কিনা।
প্রাথমিক মূল্যায়ন:
কোম্পানি গুলো কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সিভিকে প্রাথমিক মূল্যায়নের একটি মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। আপনার সিভি দেখে তাদের উপযুক্ত কর্মী নির্ধারণ করা সহজ হয় এবং কোম্পানির প্রয়োজন অনুযায়ী প্রার্থীদের যোগ্যতা সহজেই অনুমান করা সহজ হয়।
ব্যক্তিগত তথ্য উপস্থাপন:
বাংলা সিভি অনেকাংশে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য পরিবেশন করে, যেমন নাম, যোগাযোগের ঠিকানা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, এবং আরও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য। কোম্পানি বা নিয়োগকর্তার কাছে এই সকল তথ্য পেশাদার ভাবে প্রদান করা সম্ভব হয় কেবল সিভির মাধ্যমে।
সুতরাং, সিভি নিজেকে একজন উপযুক্ত নিয়োগ প্রার্থী হিসাবে প্রদর্শন করার জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া, যা আপনাকে কোন প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার জীবন শুরু করাতে সাহায্য করে।
পেশাগত প্রোফাইল:
সিভি একপ্রকার আপনার পেশাগত প্রোফাইল হিসাবে কাজ করে এবং আপনার কর্মপদ্ধতি, দক্ষতা এবং অর্জন, পেশাগত লক্ষ্য ইত্যাদি প্রদর্শন করতে সাহায্য করে। সিভি আপনার নতুন কর্মসংস্থানের পথে একটি সম্ভাব্য রাস্তা তৈরী করে যা পরবর্তীতে ক্যারিয়ারের উন্নতির করতেও সাহায্য করে।
প্রাথমিক ফিল্টার:
সিভি একজন প্রার্থীর প্রাথমিক ফিল্টার হিসাবে কাজ করে, যা নিয়োগ কর্তাকে দক্ষ এবং উপযুক্ত কর্মীদের শর্ট লিস্ট তৈরি করতে সাহায্য করে। নিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য কোম্পানি গুলো নিয়োগ প্রার্থীদের সিভির গুরুত্বপূর্ন দিক গুলো প্রাথমিকভাবে স্ক্যান করে। তাই একটি পেশাদার সিভি নিয়োগকর্তাদের কাছে একটি প্রাথমিক ফিল্টার হিসাবে গণ্য হতে পারে।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ:
সিভি নিয়োগ প্রার্থীর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের একটি প্রধান মাধ্যম হিসাবে কাজ করে, যা নিয়োগকর্তার সাথে নিয়োগ প্রার্থীর যোগাযোগ এবং সংলাপের সুযোগ সৃষ্টির পথকে সহজ করে। যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলে, তখন সিভি নিয়োগকর্তা এবং প্রার্থীর মধ্যে ব্যক্তিগত যোগাযোগের একটি সেতু হিসাবে কাজ করে, যা পরবর্তীতে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করাতে সাহায্য করে।
প্রকাশ্যতা এবং স্বচ্ছতা:
একটি আধুনিক সিভি দ্বারা আপনার পেশাগত এবং ব্যক্তিগত উভয় তথ্যই প্রদর্শিত করা যায়, যা নিয়োগকর্তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার সিভি প্রকাশ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়োগকর্তার কাছে আপনার পেশাদার এবং রুচিশীল ব্যক্তিত্বকে উপস্থাপন করে।
উপরে উল্লেখিত এই গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলোর কারণে সিভি প্রায় প্রত্যেক নিয়োগ প্রার্থীদের কাছে পেশাদার এবং মৌলিক দক্ষতা অংশ হিসাবে গন্য হয়।
বাংলা সিভি লেখার নিয়ম সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নত্তোর :
এই অংশে বাংলায় লিখিত আধুনিক বাংলা সিভি ও তা লেখার নিয়ম সম্পর্কে বহুল প্রচলিত কিছু প্রশ্নের উত্তর সংক্ষেপে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যাতে সিভি লেখার সময় আপনাকে উদ্বিগ্ন হতে না হয়।
সিভি কত পৃষ্ঠা লিখতে হয়?
আধুনিক বাংলা সিভি কত পৃষ্ঠায় লিখতে হবে এই বিষয়টি ততটা গুরুত্বপূর্ন নয়। কারণ এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরণের মতামত পাওয়া যায়। এই বিষয়টি আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং আপনার অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, পেশাদার তথ্য এবং অন্যান্য তথ্যের উপর নির্ভর করে। তবে, সাধারণভাবে সিভি এক বা দুই পৃষ্ঠার মধ্যে লেখা উত্তম। কিন্তু আপনার অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা এবং অন্যান্য বিবরণের মাত্রা যদি অনেক বেশি হয় তাহলে এটি আরও বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
একটি সুংগঠিত এবং আধুনিক সিভি এক পৃষ্টার মধ্যেই হয়ে থাকে। তবে অতিরিক্ত যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার কারণে সিভির পেজ সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সেটা দোষের কিছু নয়। কারণ কিছু কিছু পদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা এতো বেশি পরিমানে উপস্থাপন করতে হয় যে, যার কারণে একটি সিভি অনেকগুলি পৃষ্ঠায় হতে পারে।
তবে যেকোনো সিভি তৈরি করার সময়, সেটি সংক্ষেপে এবং পেশাদার ভাবে আপনার যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা গুলোকে প্রদর্শন করা উচিত। অযথা অপ্রাসঙ্গীক তথ্য ব্যবহার করে সিভিকে কয়েক পৃষ্টা করা মোটেও উচিত নয়। কারণ এতে সিভির পেশাদার মনভাবে নস্ট হয়। তাছাড়া নিয়োগ কর্তারাও এতো বড় সিভি করতে মনে হয়না পছন্দ করেন।
সিভিতে কি জন্ম তারিখ থাকা উচিত?
হ্যাঁ, সিভি এবং অন্যান্য জব অ্যাপ্লিকেশনে জন্ম তারিখ প্রদান করা উচিত। জন্ম তারিখ আপনার ব্যক্তিগত এবং পেশাগত তথ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেমন বয়স, ঠিকানা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি।
এছাড়াও এটি কোম্পানির জন্য জেষ্ঠতা নির্ধারণ করার জন্য প্রয়োজনীয় এবং আপনার বয়সের সাথে অভিজ্ঞতা অর্জনের বিষয়টি অনুমান করে আপনার কর্মদক্ষতা বের করতে বেশ সাহায্য করে থাকে।
এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ফলে সিভি তে উল্লেখতিত জন্ম তারিখ দেখে নিয়োগকর্তা নির্ধারণ করতে পারেন যে আপনি নির্ধারিত বয়সসীমার মধ্যে আছেন কিনা।
তাছাড়া, কিছু কিছু কোম্পানিতে কর্মীর জন্য বেতন, উপাধি, ছুটি এবং অন্যান্য সুবিধাগুলি নির্ধারক করার জন্য জন্ম তারিখ জরুরী হতে পারে।
তাই সিভি তৈরি করার সময়, সিভিতে সঠিক এবং সত্য জন্ম তারিখ প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে আপনার বয়সসীমা, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা অর্জনের একটি রেশিও নিয়োগকারীরা সহজেই অনুমান করতে পারেন।
সিভি এবং রেজিউমে কি এক জিনিস?
হ্যাঁ, সিভি এবং রেজিউমে একই জিনিস অর্থাৎ সিভিকেই Curriculum Vitae বা Resume বলা হয়। সিভি এবং রেজিউমে একই পদ্ধতিতে পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের তথ্য সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়, যেগুলি আপনার ক্যারিয়ারের প্রবেশের জন্য বেশ সহায়ক হয়ে থাকে।
তবে, আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু দেশে Curriculum vitae (CV) এবং Resume মধ্যে সামান্য পার্থক্য করা হয়ে থাকে। এই দেশ গুলোতে চাকরির জন্য ব্যবহৃত জীবন বৃত্তান্তকে কে Resume এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যবহৃত জীবন বৃত্তান্তকে Curriculam Vitae বলা হয়। এছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশে Curriculum Vitae এবং Resume একই জিনিস।
আর বাংলাদেশেও পেশাগত সারসংক্ষেপে বলতে, সিভি এবং রেজিউমে এই দুটি বাংলা শব্দ একই অর্থে ব্যবহার করা হয় এবং পেশাগত জীবন বা চাকরি এবং উচ্চ শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রে সিভি ব্যবহৃত হয়।
সিভি আর কভার লেটার কি একই জিনিস?
না, সিভি এবং কভার লেটার দুটি ভিন্ন জিনিস। সিভি (Curriculum Vitae বা Resume) একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ পত্র যা একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের তথ্য সংক্ষেপে উল্লেখ করে। সিভি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, কাজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা, ব্যক্তিগত তথ্য এবং অন্যান্য কাজ সম্পর্কিত তথ্য উল্লেখ করে। সিভি সাধারণভাবে নিয়োগকর্তাদের কাছে নিজের যোগ্যতা প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কভার লেটার হলো একটি ফর্মাল পত্র যা সিভির সাথে প্রেরণ করা হয়। এটি সিভির সংক্ষিপ্ত বিবরণকে নিয়োগ কর্তার কাছে পেশাদার উপায়ে বিস্তারিত ভাবে উপিস্থাপন করে। কভার লেটার নিয়োগ প্রক্রিয়াকে গতিশীল এবং চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ সহায়তা করে।
করন কভার লেটারের মাধ্যমে আপনি আপনার সিভি দেওয়ার সাথে সাথে একটি ব্যক্তিগত মেসেজ প্রদান করতে পারেন। কভার লেটারে আপনি নিজের আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন, নিজের যোগ্যতা গুলোকে আরও ভালো ভাবে হাইলাইট করতে পারেন, এবং কোম্পানির কাছে আপনার প্রস্তাবনা বা কর্মচারী হিসেবে আপনি কেন যোগ্য সে বার্তা প্রেরণ করতে পারেন।
সুতরাং, সিভি এবং কভার লেটার এক জিনিস নয়, বরং দুটি বিভিন্ন ধরণের পত্র। তবে উভয়টিই চাকরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়।
শেষ কথা :
চাকরির জন্য বাংলা সিভি লেখার সময় এই নিয়ম গুলো মাথায় রেখে, আপনার সিভি তৈরি করতে প্রস্তুত হওয়া উচিত এবং সম্পূর্ণ ভাবে পেশাগত উপায়ে ব্যক্তিগত তথ্য, পেশাদার তথ্য, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা গুলো উপস্থাপন করা উচিত। সিভি একজন নিয়োগকারীর মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট, তাই সিভি লিখার সময় সাথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আশা করি বাংলায় আধুনিক সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে সক্ষম হয়েছি।