আমাদের ব্যক্তিজীবন, একাডেমিক জীবন বা কর্মজীবন সর্ব ক্ষেত্রেই দরখাস্ত একটি অপিহার্য বিষয়। এটি আবেদন পত্র নামেও পরিচিত। আমাদের একাডেমিক জীবনের ক্লাস ফাইভ সিক্স থেকে আবেদন পত্র বা দরখাস্ত লিখন শিখানো হয়। তবুও প্রয়োগ ক্ষেত্রে আসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা একটি সুলিখিত দরখাস্ত লিখতে বিড়াম্বনার মধ্যে পড়ি। যদি এটি মোটেও কাম্য নয় তবুও এটিই বাস্তবতা। তাই এই আলোচনায় আমরা কিভাবে একটি সুলিখিত দরখাস্ত লিখতে হয় তা নিয়ে বিষদ ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব। একটি সুলিখিত দরখাস্ত লিখতে একটি দরখাস্তের কয়টি অংশ ও কি কি সেটি আবশ্যই আপনার জানা থাকতে হবে। চলুন তাহলে শুরু করি।
আরও পড়ুন : দরখাস্ত লেখার নিয়ম ও নমুনা ২০২৪ [Updated নিয়ম]
দরখাস্ত কি?
মূল আলোচনায় যাওয়ার আগে দরখাস্ত কি বা দরখাস্ত কাকে বলে সেটি নিয়ে চলুন একটি সংক্ষিপ্ত ধারনা দেওয়া যাক। দরখাস্ত শব্দের অর্থ হলো আর্জি বা আবেদন। কোন বিশেষ প্রয়োজনে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট কিছু পাওয়ার আবেদনকেই দরখাস্ত বলে। চাকরির নিয়োগ, প্রশংসাপত্র বা কোন সহায়তা ইত্যাদি চেয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট পত্রের মাধ্যমে যে আবেদন করা হয় তাই দরখাস্ত।
দরখাস্তের কয়টি অংশ ও কি কি?
একটি দরখাস্ত বা আবেদন পত্রের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। ১. শিরোনাম বা বাহিরের অংশ ২.পত্রগর্ভ বা ভিতরের অংশ। শিরোনাম বা বাহিরের অংশ নিয়ে আমাদের আলাদা একটি পোস্ট রয়েছে চাইলে আপনি সেটা দেখে নিতে পারেন। চিঠির খামের উপর লেখার নিয়ম
একটি দরখাস্তের পত্রগর্ভ বা ভিতরের অংশে মোট ১০টি অংশ থাকে। যদি কোন দরখাস্তে এই দশটি অংশ থাকে তাহলে তাকে সুলিখিত এবং পেশাদার দরখাস্ত বলে। এই দশটি অংশ হল:
- তারিখ : একটি সুলিখিত দরখাস্ত লেখার সময় সর্বপ্রথম আপনাকে তারিখ দিয়ে দরখাস্ত বা আবেদন পত্র লেখা শুরু করতে হবে। এবং এই তারিখটি অবশ্যই নাম স্বাক্ষরের তারিখের সাথে মিল থাকতে হবে।
- প্রাপকের নাম/পদবী ও ঠিকানা : দরখাস্ত বা আবেদন পত্রে মূলত প্রাপকের নামের পরিবর্তে তার পদবীই ব্যবহার করা হয়। যেমন : প্রধান শিক্ষক, জেনারেল ম্যানাজার, সম্পাদক ইত্যাদি। আধুনিক আবেদন পত্র লিখনের নিয়ম অনুসারে প্রাপকের নাম/পদবী লেখার পূর্বে বরাবর লেখার প্রয়োজন নেই। সরাসরি প্রাপকের পদবী লিখে আবেদন পত্র শুরু করা যায়। প্রাপকের পদবী লেখার পর আবশ্যই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানে লেখতে হবে। প্রাপকের ব্যক্তি ঠিকানা নয়।
- বিষয় : যে কোন দরখাস্ত বা আবেদন পত্রের অবশ্যই একটি বিষয় থাকতে হবে। এটি প্রাপক কে সহজেই তার নিকট কেন দরখাস্ত লেখা হয়েছে সে বিষয়ে ধারণা দিতে সাহায্য করে। সেকারণে দরখাস্তের বিষয় অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে।
- সম্ভাষণ : যেহেতু দরখাস্ত কোন বিষয়ে আবেদন করার জন্য লেখা হয় সেহেতু প্রাপক কে সম্বোধন করার সময় আবশ্যই যথাযথ সম্ভাষণ ব্যবহার করতে হবে। বাংলা দরখাস্তে জনাব, মহোদয় বহুল ব্যবহৃত দুটি সম্ভাষণ। আপনি আপনার দরখাস্তের এর যে কোন একটি ব্যবহার করতে পারেন।
- মূল পত্র : মূল পত্রের তিনটি অংশ থাকে ১.ভুমিকা ২. মূল বক্তব্য ৩. উপসংহার। ভুমিকা অংশে সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিবেন। মূল বক্তব্য অংশে আপনি কেন দরখাস্ত লিখছেন তা যথাযথ ভাবে উল্লেখ করবেন। এবং উপসংহার অংশে আপনার আবেদনটি প্রহনের জন্য আনুরোধ করবেন।
- বিদায় সম্ভাষণ : “বিনীত নিবেদক বা নিবেদক” এই অংশটিকে বলা হয় বিদায় সম্ভাষণ। একটি গ্রহনযোগ্য দরখাস্তে আবশ্যই বিদায় সম্ভাষণ থাকতে হবে।
- নাম স্বাক্ষর : বিদায় সম্ভাষণের নিচে আপনার নাম উল্লেখ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্বাক্ষর করবেন। স্বাক্ষরে আবশ্যই তারিখ থাকতে হবে।
- প্রেরকের ঠিকানা: নাম স্বাক্ষরের পর আপনার পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
- সংযুক্তি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) : সব দরখাস্ত বা আবেদনপত্রে সংযুক্তির প্রয়োজন পড়ে না। তবে যদি প্রয়োজন পড়ে যেমন চাকরির ক্ষেত্রে তাহলে দরখাস্তের নিচে সংযুক্তি কথাটি লিখে কি কি কাগজ সংযুক্ত করবেন তার একটি তালিকা দিয়ে দিবেন।
- খাম : সর্বশেষ হচ্ছে খাম। দরখাস্ত সবসময় খামের মধ্যেই দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এবং খামের সাইজ যাতে স্টেন্ডার্ড হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
শেষ কথা :
দরখাস্তের অর্থই হচ্ছে আবেদন। তবে এই আবেদন গৃহিত হবে কিনা সেটা নির্ভর করে কিভাবে দরখাস্ত লেখা হয়েছে তার উপর। একটি সুলিখিত দরখাস্ত দ্রুত গৃহিত হাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তেমনি ভাবে একটি অপেশাদার ভাবে লেখা দরখাস্ত বাতিল হাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তাই এই আলোচনায় আমরা একটি সুলিখিত এবং পেশাদার লেখার উপর জোড় দিয়েছি। আশা করি একটি দরখাস্তের কয়টি অংশ ও কি কি তা এতক্ষনে আপনারা বুঝে গিয়েছেন। এমন দরকারী সব পরামর্শ এবং টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন।